রাজশাহী শহরের একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা সেই দিল আফরোজ খুকির পাশে দাঁড়াল রাজশাহী জেলা প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগ





মাধ্যমে খুকির বর্তমান অবস্থা দেখে রাজশাহীর পবা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীন এগিয়ে আসেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি নিজে খুকির বাড়ি গিয়ে তার খোঁজ খবর নেন। আর তার এই কাজ দেখে এগিয়ে আসে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। নেয়া হয় খুকির





দেখাশুনার দায়িত্ব। শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, আমি তার বাসায় গিয়ে দেখি আসলে বাসাটা বসবাসের উপযোগী নয়। এছাড়াও তার খাবার দাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। রেস্টুরেন্টে গেলেও তাকে খাবার খেতে দেয়া হয় না। আমাদের আগ্রহ দেখে একজ প্রতিবেশি এগিয়ে এলেন। তিনি জানালেন, তাকে বাজার করে দিলে বা টাকা দিলে তিনি তিনবেলা রান্না করে খুকিকে খাওয়াবেন। আমি সে ব্যবস্থা করে দিয়ে এলাম।





জানা গেছে, শেখ এহসান উদ্দীনের এই কাজ দেখে এগিয়ে আসে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীনকে সাথে নিয়ে খুকির বাসায় যান। এরপর খুকির সমস্ত ‘টেক কেয়ার’ এর দায়িত্ব নেয়া হয়। সহকারি কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসানকে খুকি বলেন, আমার বাবা ছিলেন রাজশাহী জেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ট এবং মা ছিলেন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সবাই আমাকে ঠকিয়েছে এবং পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। আর এজন্যই তার এই সংগ্রামী জীবন।





খুকি আরো জানান, তার নিজস্ব বাড়ি আছে। পৈত্রিকভাবে তারা স্বচ্ছল ছিলেন কিন্তু কিছুটা স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ায় তার নিজের ভাই বোনও তাকে দেখেনা। বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, খুকির তেমন ডিমান্ড নেই। তার বাসা আছে, জমি আছে। শুধু তার প্রয়োজন আদর যত্ন নেয়া। এছাড়াও যে বাড়িটা আছে তা বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে





তার বাসাটাকে পুরোপুরি বসবাসের উপযোগী করে তুলছি। এখন হয়তো সকলেই খুকির পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে খুকিকে প্রতি মাসে বাজার খরচ ও তাকে তদারকি করবে। কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে খুকিকে সহায়তা করতে চান তবে করতে পারেন, যদি তিনি তা





নেন। কেননা কারো আর্থিক সহায়তাই এই নারী নিতে চান না। জানা গেছে, কিশোরী বয়সে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে খুকির বিয়ে হয়েছিল। মাস যেতে না যেতেই স্বামী মারা যান। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবার আত্মীয়-স্বজন তাকে গৃহ ছাড়া করেন। ভাইদের আপত্তিতে বাবার বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। এরপর থেকেই কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। সংবাদপত্র বিক্রেতা খুকি কোনো সময় লোকের কাছে হাত পাতেন নি। তিনি নিজেই কর্ম করে নিজের জীবন যাপন করেন।





উল্লেখ্য, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ১১ বছর পূর্বের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার এজেন্ট ও স্থানীয় পত্রিকার সার্কুলেশন থেকে পত্রিকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নগরীতে। খুকির হাতের পত্রিকা পড়ে তারা, খুকির জীবনের গল্প পড়া হয়ে ওঠে না। রাজশাহী নগরীর বিভিন্নপ্রান্তে ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করেন দিল আফরোজ খুকি। খুকিরও গল্প আছে সে গল্প জানা হয়ে ওঠে না কারো,





খুকির ভাইরাল ভিডিও দেখে অনেকেই কাঁদে, ফেসবুকে শেয়ার দেয় কিংবা জানতে চায় খুকির বর্তমান অবস্থা।